সুনামগঞ্জ , বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫ , ১৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প কাজে আসেনি, শাল্লার পাঁচ গ্রাম অন্ধকারে ছাতকে বালুখেকোদের বিরুদ্ধে অভিযান : ৪টি অবৈধ ড্রেজার বিকল বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ, কনস্টেবল শ্রীঘরে টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধারের দাবিতে মানববন্ধন সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নুর হোসেন কারাগারে মরা চেলা নদীতে বালুখেকোদের তান্ডব, হুমকিতে রোপওয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্প টাঙ্গুয়ার হাওর জলাভূমি বাস্তবায়ন প্রকল্পের সম্প্রদায়ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কর্মশালা সুনামগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী অ্যাড. আব্দুল হকের প্রচারণা শুরু দেশ বদলাতে চাইলে নিজেকে বদলাতে হবে : বিভাগীয় কমিশনার এক মাসে জব্দ প্রায় ১৫ কোটি টাকার অবৈধ পণ্য জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ সড়ক সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন পথে যেতে যেতে : পথচারী সুনামগঞ্জ পৌরসভার ৬২ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা বজ্রপাতের ঝুঁকিতে সুনামগঞ্জ শীর্ষে বন্ধ করা হলো সেই গ্যাস পাইপ লাইনের লিকেজ আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখছে সুনামগঞ্জের ইমা হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সে গ্রাহক হয়রানি, বছরের পর বছর ঘুরেও মিলছে না বীমার টাকা পাকিস্তানে আত্মঘাতী হামলায় ১৬ সেনা নিহত টাঙ্গুয়ার হাওর রক্ষায় কাজ করবে সরকার: মহাপরিচালক শহরে সক্রিয় মাদক কারবারিরা

সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প কাজে আসেনি, শাল্লার পাঁচ গ্রাম অন্ধকারে

  • আপলোড সময় : ০২-০৭-২০২৫ ১২:০৮:২৬ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০২-০৭-২০২৫ ১২:১৪:১৯ পূর্বাহ্ন
সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প কাজে আসেনি, শাল্লার পাঁচ গ্রাম অন্ধকারে
শামস শামীম, শাল্লা থেকে ফিরে ::
পাশের ঘরে পল্লী বিদ্যুতের আলো জ্বলছেচালু আছে ফ্যান, টিভি, চার্জারবৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি ছড়িয়ে আছে ঘরজুড়েঅথচ প্রতিবেশী ঘরের মানুষ আছেন অন্ধকারে
বিদ্যুৎ না থাকায় থমকে আছে তাদের জীবন। তাই চরম ভোগান্তিতে পার করছেন দিন।
সুনামগঞ্জের দুর্গম উপজেলা শাল্লার ৫টি গ্রাম শাসখাই, আগুয়াই, মৌরাপুর, বিলপুর ও দত্তপাড়া ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে। জলবায়ু ট্রাস্টের ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের সর্ববৃহৎ সৌর প্রকল্পটি প্রায় চার বছর ধরে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রহিম-আফরোজ স্থাপন করে দিলেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রকল্প শেষ হয়ে কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও এখনো প্রকল্পটি সরকারিভাবে গ্রহণই করা হয়নি।
অন্যদিকে সুনামগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে ‘দুর্গম এলাকার’ এই সংযোগ পল্লীবিদ্যুতে স্থানান্তরের কোনও সম্ভাবনা নেই। ভুক্তভোগী হাওরবাসীর অভিযোগ, সোলার প্রকল্পটি স্থাপনের পর থেকেই কাঙ্খিত সেবা পাননি তারা। সরকারি টাকায় স্থাপিত স্থাপনাও জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। বৈদ্যুতিক খুঁটি, তার ও অন্যান্য সরঞ্জামও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পল্লীবিদ্যুতে স্থানান্তর নিয়েও দুই দফতরের টালবাহানা চলছে। অথচ পুরো জেলা সরকারিভাবে শতভাগ বিদ্যুতায়িত এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে প্রায় দুই বছর আগে। গ্রামগুলো ঘুরে ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৫ গ্রামের প্রায় ৫শ গ্রাহকের জন্য ৬৫০ ওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব নবায়নযোগ্য জ্বালানীর এই সৌর প্রকল্প স্থাপনকাল ছিল ২০১৩ সাল।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রহিম-আফরোজ প্রায় ৮ মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও দায়সারা কাজ শেষ হয় ২০১৭ সালে। প্রকল্প চালু হয়ে চার বছর আগে বন্ধ হয়ে গেলেও এখন সরকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রতিষ্ঠানটি বুঝে নেয়নি। কাঙ্খিত কাজ না হওয়ায় এটা হয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে। এদিকে সরকারি কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ বিভাগ লোডশেডিং মুক্ত জীবনের স্বপ্ন দেখিয়েছিল গ্রাহকদের। কিন্তু এসব ছিল কথার কথা। ২০১৮ সাল থেকে চালুর পর গড়ে ২ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাননি তারা। অথচ সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী তাদেরকে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা ছিল।
গ্রাহকরা জানান, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না দিয়েও মাস শেষে দিতে হতো সম্পূর্ণ বিল। ২০২০ সালের পর সৌরবাতি কার্যত নিভে যায়। এই সময় এলাকায় পল্লীবিদ্যুতের সংযোগ আসে। সৌরবিদ্যুৎ সেবা না পেয়ে ৪৯৭ জন গ্রাহক বিল দেওয়া বন্ধ করে দেন। কিন্তু নিয়মানুযায়ী সংযোগ বিচ্ছিন্ন না হওয়ায় প্রতি মাসেই সেবা না দিয়েও বিল আসতে থাকে। এতে মোটা অংকের টাকা জমা হয়ে যায়।
গ্রাহকরা মানবববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশসহ স্মারকলিপিও দিচ্ছেন দিনের পর দিন। কিন্তু বিদ্যুতের সংযোগের অনুমতি মিলছেনা। এলাকাবাসী জানান, এই বিদ্যুৎ জটিলতার বিষয়টি অবগত হয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামির সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনের ঘোষিত প্রার্থী ও বিশিষ্ট আইনজীবী শিশির মনির ব্যক্তিগত তহবিল থেকে গত জানুয়ারি মাসে পুরো বিল পরিশোধ করেছেন।
জানা গেছে বিল পরিশোধের পর বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কেন্দ্রীয় সচিবালয় থেকে বিদ্যুৎ বিভাগের চার প্রকৌশলীকে সরেজমিন পরিদর্শন করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে। তারা সম্প্রতি পরিদর্শন করে পল্লীবিদ্যুতে স্থানান্তরের মতামত দিয়েছেন। গ্রাহকদের পাশের ঘরে পল্লীবিদ্যুতের সংযোগ থাকলেও লোড ক্যাপাসিটির কথা বলে পল্লী বিদ্যুৎ বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে। ফলে ৫ গ্রামবাসীর বিদ্যুৎ ভোগান্তির দূর হবার সম্ভাবনা নেই।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শাসখাই বাজারের পাশেই শিবেরহাটি পাড়া। এই পাড়ায় পল্লীবিদ্যুতের সংযোগ আছে ২০২০ সাল থেকে। গ্রামের মনীন্দ্র দাস, নরেন্দ্র দাস, ফুলবাসী দাসসহ পাড়ার সবার বাড়িতে বিদ্যুৎ আছে। কিন্তু পার্শ্ববর্তী তপন দাস, শিপেন্দ্র দাস, বিধু দাস, সুখলাল দাসসহ অনেকেই আছেন অন্ধকারে। তাদের দৈনন্দিন কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে। ছেলে-মেয়েরাও লেখাপড়া করতে পারছেন না। মৌরাপুর গ্রামের শিশু দাস বলেন, আমরা এই প্রকল্পে প্রতারিত হয়েছি। স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল আমাদের। কিন্তু আমরা সামান্য সেবাই পায়নি। এখন স্থায়ী ভোগান্তিতে আছি। পল্লীবিদ্যুৎ আমাদের সংযোগ দিচ্ছেনা।
তপন দাস বলেন, প্রশাসনিক জটিলতায় আমাদেরকে পল্লীবিদ্যুতে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। পল্লী বিদ্যুতও আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তারা নানা ছুতো খুঁজছে। অথচ আমাদের ঘরের পাশেই তাদের সংযোগ, ট্রান্সফমারসহ সব অবকাঠামো আছে। তিনি বলেন, বিদ্যুৎহীন ৫ গ্রামের মানুষের জীবন থমকে আছে।
সুখলাল দাস বলেন, আমাদের ছেলে মেয়েরা পড়ালেখা করতে পারেনা। রোগীদেরও অনেক কষ্ট হচ্ছে। সারাজেলাকে সরকার শতভাগ বিদ্যুতায়িত এলাকা ঘোষণা করলেও আমরা এখনো অন্ধকারে আছি। আমরা এই অবস্থা থেকে মুক্তি চাই।

বিশিষ্ট আইনজীবী শিশির মনির বলেন, আমি এলাকাবাসীর এই দুর্ভোগ ও জটিলতার কথা শুনে বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে বকেয়া বিল পরিশোধের ব্যবস্থা করেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা বলেছি। তারা আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন। হয়তো দ্রুতই এই সমস্যার সমাধান হবে।
সুনামগঞ্জ বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাসেল আহমাদ বলেন, সরেজমিন পরিদর্শনের পর আমরা প্রতিবেদন দিয়েছি। পল্লীবিদ্যুতে যেতে আর কোনও জটিলতা নেই।
সুনামগঞ্জ পল্লীবিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজার মিলন কুমার কুন্ডু বলেন, দুর্গম এলাকার এই লাইন আমরা নিব না। এই দায়িত্ব বিদ্যুৎ বিভাগকেই নিতে হবে। এই ৫টি গ্রামের লাইন আমাদের নেওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। আমরা সেটা কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছি। প্রকল্প এলাকায় রহিম আফরোজ কর্তৃপক্ষের কাউকে না পাওয়ায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স
সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প কাজে আসেনি, শাল্লার পাঁচ গ্রাম অন্ধকারে

সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প কাজে আসেনি, শাল্লার পাঁচ গ্রাম অন্ধকারে